December 13, 2024 2:57 pm

২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

December 13, 2024 2:57 pm

২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Bangladesh children problem:গাজীপুর শিশু বিকাশ কেন্দ্রের পরতে পরতে অনিয়মের অভিযোগ। অভিভাবকহীন পথ শিশুদের খাবারেও লোভীদের থাবা!

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest
Pocket
WhatsApp

Gazipur Shishu Bikash Kendra has been complaining of irregularities. The greedy paws in the children’s food without guardians!

বাংলাদেশ

দ্যা হোয়াইট বাংলা ডিজিটাল ডেস্ক: কারোর বাবা নেই, কারো মা। অনেকের আবার মা-বাবা থেকেও নেই। তাদেরই বলা হয় ছিন্নমূল। এ শিশুরাও স্বপ্ন দেখে রঙিন আগামীর। অপার সম্ভাবনা নিয়ে জন্ম নিলেও সমাজ বিচ্যুতিতে তা যেন ফিকে হয়ে যায়। বলছি সেসব শিশুর কথা, যাদের বেড়ে ওঠা কোনো রাস্তার পাশে, রেল স্টেশনে বা লঞ্চ টার্মিনালে। ওদের অধিকাংশই জানে না মা-বাবার ঠিকানা। আবার অনেকে জানলেও অভিভাবকহীন। খোলা আকাশ আর ফুটপাতে বেড়ে উঠতে উঠতে জীবন তাদেরকে দাঁড় করিয়ে দেয় নির্মম বাস্তবতায়।

সুবিধাবঞ্চিত এই শিশুদের সুন্দর আগামী গড়তেই প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘শিশু বিকাশ কেন্দ্র’। রাস্তা থেকে যত্নকেন্দ্রে ঠাঁই হয় তাদের। যেখানে থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা, শিক্ষা দেয়ার কথা বিনা মূল্যেই। তবে গাজীপুরের শিশু বিকাশ কেন্দ্র যেন নামেই! পরতে পরতে এখানে ‘বিকাশ হচ্ছে’ অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। লোভের থাবা থেকে বাদ পড়েনি শিশুদের খাবারও। তাই বরাদ্দের বড় অংশই যাচ্ছে তাদের পকেটে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা পাচ্ছে না অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও। গাজীপুরের শিশু বিকাশ কেন্দ্রে দিনের পর দিন এমন নয়ছয় চললেও দেখার যেন কেউ নেই। সুন্দর ভবন দেখে বাইরে থেকে যে কেউ ধারণা করবে এখানে দারুণভাবে বেড়ে উঠছে শিশুরা। তবে এখানকার ভেতরের চিত্র ভিন্ন। যে উদ্দেশ্যে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করছে, তা যেন ম্লান হতে চলেছে অসাধু কর্মকর্তাদের জন্য।

নানা অনিয়মের ‘অসুখে’ আক্রান্ত শিশু বিকাশ কেন্দ্রটি। যে খাবার পুষ্টি জোগাবে তাতেও যেন পুকুরচুরি। সরকার নির্ধারিত খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন মাছ, মাংস ও ডিম বরাদ্দ থাকলেও শিশুদের কপালে জুটছে কেবল নিম্নমানের সবজি আর ডাল। আর সপ্তাহে মাঝেমধ্যে শিশুর পাতে মেলে মুরগির মাংস। সপ্তাহে প্রতি রোববার আমিষের চাহিদা পূরণে তালিকায় রয়েছে গরুর মাংস। তবে অতিবিলাসী এ গরুর মাংসের কোনো অস্তিত্ব নেই। এ ছাড়া কোমলমতি এসব শিশুর জন্য যে পরিবেশে রান্না করা হয় সেটাও নোংরা। রান্নাঘরের কোনায় কোনায় যেন ধুলাবালি আর নোংরা বাসা বেঁধেছে।

এখানেই শেষ নয়। কেন্দ্রটির সবখানেই যেন অনিয়ম। শীত পেরিয়ে শহরে এখন বসন্ত। কিন্তু গাজীপুরের শিশু বিকাশ কেন্দ্রে এখনও যেন শীত আসেনি। তাই তো বরাদ্দকৃত গরম কাপড় পড়ে আছে গোডাউনে। অপেক্ষা হয়তো আগামী পৌষের। কিন্তু এবারের হাড়কাঁপানো শীত কেমন কেটেছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের, তা নজরে পড়েনি দায়িত্বশীলদের। অবশ্য তাদের চোখে পড়ার কথাও নয়। কেননা, বেশিরভাগ সময়ই দায়িত্বশীল কর্তাবাবুরা থাকেন না। কাউন্সিলিং ক্লাস নেয়ার কথা থাকলেও সেটা থেকেও অনেকটা বঞ্চিত কোমলমতিরা।

এই কেন্দ্রের একাধিক শিশু জানায়, ঠিকমতো তিন বেলা পেটপুরে খেতে পায় না তারা। যে পরিমাণ খাবার দেয়া হয় তা যথেষ্ট নয়। আর রান্নার মান নিয়েও অভিযোগ করে তারা।

নাহিয়ান নামে এক শিশু জানায়, তার মা-বাবা নেই। ফলে ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত থাকতে হচ্ছে তাকে। এখানে ভেবেছিল পেটপুরে খেয়ে ভালো থাকবে, কিন্তু সেটাও ঠিক মতো জোটে না।

এ ছাড়া পড়ালেখার কোনো পরিবেশ নেই এখানে। কোনো সাবজেক্টের নির্ধারিত কোনো শিক্ষক নেই। আর খেলাধুলা সেটা তো তাদের জন্য বিলাসিতা। গণমাধ্যমকর্মীর উপস্থিতিতে নানা অনিয়ম আর অভিযোগের খাতা খুলে বসে তারা।

বিকাশ কেন্দ্রের শিশু বিজয় জানায়, বাইরে থাকাকালেও তাদের লেখাপড়া ছিল না। এখনও অবস্থার উন্নতি হয়নি। লেখাপড়া করে বড় হতে চায়। কিন্তু ঠিকমতো পড়াশোনাই হচ্ছে না এখানে।

এখানে দায়িত্বশীলরা হয়তো ভাবে রাস্তা থেকে তুলে আনা শিশুর বিকাশে এতকিছুর দরকারই-বা কী? তাই নেই খেলাধুলার পরিবেশও। সংস্কৃতির মননশীলতা তৈরির কথা আরও দূরে থাক।

অভিযোগ রয়েছে, শিশুদের নিম্নমানের খাবার আর বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফুলেফেঁপে লাল হয়ে উঠছে তাদের পকেট। কেন্দ্রটিতে প্রতিমাসে ১০০ জনের বরাদ্দ পেলেও অনুসন্ধান করে জানা যায় প্রায়ই উপস্থিতির সংখ্যা দেখা যায় ৮০ জনের নিচে।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমির তথ্যমতে, খাবার, পোশাক, ওষুধ ও শিক্ষা উপকরণসহ আনুষঙ্গিক খরচ মেটাতে প্রতিমাসে একজন শিশুর পেছনে সরকার ৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দিয়ে থাকে। প্রশ্ন উঠতে পারে: বিকাশ কেন্দ্রে অনিয়মের এত বিকাশ ঠেকাতে পদক্ষেপ নেবে কে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নৃ-বিজ্ঞান শাখার শিক্ষক ড. রাশেদা রওনক খান বলেন, ‘শিশুদের বিকাশের জন্য যে কেন্দ্রগুলো রয়েছে সেগুলোর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে সরকারের যে মহৎ উদ্দেশ্য, সেটা বাস্তবায়ন করা যাবে। এ কেন্দ্রগুলোতে অবশ্যই খেলাধুলার পরিবেশ এবং পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া কেন্দ্রগুলো যে মন্ত্রণালয়ের অধীন, সে মন্ত্রণালয়ের আরও নজরদারি বাড়াতে হবে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে গাজীপুর শিশু একাডেমির লাইব্রেরিয়ান কাম-মিউজিয়াম কিপার রঞ্জনা রানী রায় প্রথমে সবকিছু অস্বীকার করলেও পরে সংবাদ না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি নতুন প্রতিষ্ঠান তো, আমাদের অনেক ত্রুটি আছে। আপনি একদিন আমাদের জেলা অফিসে আসেন। আমাদের ভুলত্রুটি থাকতে পারে, আমরা একদিকেরটা আরেকদিকে ম্যানেজ করে চালাই।’

গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিশু বিকাশ কেন্দ্রের জন্য সরকারের পর্যাপ্ত পরিমাণ বরাদ্দ রয়েছে। তবে গাজীপুরের এ কেন্দ্রে কেনো মানসম্মত খাবার দেয়া হচ্ছে না, তা একজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তদন্ত করা হবে। শিশুদের সুবিধার ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হলে সেটা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest
Pocket
WhatsApp

Related News

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top