কলকাতা : দিঘার (Digha) সমুদ্রে কিছুদিন আগে ছড়িয়েছিল ইয়েলো-বেলিড সি স্নেক (Yellow-bellied Sea Snake) আতঙ্ক। ভাইরাল এক ভিডিওতে ঘোরাফেরা করছিল সামনে। যেখানে দেখা গিয়েছিল একটি সাপ। যদিও পূর্ব মেদিনীপুরের ডিএফও-র তরফে যে সাপটিকে খুঁজে না পাওয়ারই বার্তা দেওয়া হয়েছিল। আতঙ্কের মূল কারণ ছিল, সমুদ্রের যে প্রবল বিষধর সাপ কামড়ালে নেই কোনও প্রতিষেধক। যে বিষয়ে বাংলার সাপ ডাক্তার চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার ( Dr. Dayal Bandhu Majumdar) জানাচ্ছেন, সমুদ্রের সাপ কার্যত মানুষকে কামড়ায় না, তাই জন্যই অ্যান্টিভেনাম (Anti Venum) ভারতে পাওয়া যায় না। সমুদ্রের সাপ ডাঙায় উঠে আসে না বলেও জানাচ্ছেন তিনি।
ইয়েলো বেলিড সাপের আতঙ্ক সামনে আসার পরই পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক জায়গায় কোনও সাপের গায়ে হলদে ছোঁয়া দেখলেই, সেটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছিল বলেই সোচ্চার হয়েছিলেন অনেকে। অকারণ আতঙ্কিত হয়ে সাপের দেহে হলদে ধরন দেখতে পেলেই জলঢোড়া বা মেটলি সাপগুলিকে নির্বিচারে মেরে ফেলা নিয়েও সোচ্চার হলেন তিনি। সমুদ্রের জলে নামার আগে সাপ নিয়ে অযথা আতঙ্কিত না হওয়ারই পরামর্শ তাঁর। পাশাপাশি সমুদ্রের সাপ ও অন্য সাপ চেনার পার্থক্য করে দেয় তাদের লেজ। এবিপি লাইভ বাংলাকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে জানালেন কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের (National Medical College) সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্পদংশন বিভাগের পরামর্শদাতা দয়ালবন্ধ মজুমদার। বাংলার সাপের ডাক্তার নামেই পরিচিত যিনি। তিনি জানাচ্ছেন, জলে সাঁতার কাটতে চ্যাপ্টা লেজের হয়ে থাকে সমুদ্রের সাপ। তিনি বলছেন, ‘সমুদ্রে নামলেই সাপে কামড়ে দেবে এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।’
চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার জানিয়েছেন, সমুদ্রের সাপ ডাঙায় উঠে আসার কথা নয়। কোনওভাবে হয়তো জেলেদের জালে তা উঠে এসেছিল। সমুদ্রের সাপের কামড়ে দেওয়ার ঘটনা ভারতে নেই বললেই চলে। গত দশ বছরে তামিলনাড়ুতে একটি মাত্র ঘটনা ঘটেছিল। জেলের জালে একটি সাপ জড়িয়ে যাওয়ার পর তাকে ছাড়াতে গিয়ে কামড় খেতে হয়েছিল জেলেকে। সাধারণত সমুদ্রের সাপ মানুষ যেখানে নামে বা সাঁতার কাটে সেখানে বা ডাঙায় আসে না। এবার জালে কোনও সাপ উঠে আসার পর কেউ কেরামতি দেখাতে গেলে তো ফল ভয়ঙ্কর হতেই পারে।
সমুদ্রের বিষধর সাপ অত্যন্ত সাংঘাতিক বলেই অবশ্য জানাচ্ছেন তিনি। ইয়েলো বেলিড নিয়ে বাড়তি আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। সমুদ্রে শুধু ইয়েলো বেলিড নয়, অনেক ধরনের বিষধর সাপই রয়েছে, যাদেরও বিষও মারাত্মক। যে সাপ কামড়ালে শরীরের সমস্ত মাংশপেশী থেকে কিডনি, দ্রুত বিকল হতে শুরু করে। যেহেতু তা ডাঙায় উঠে আসে না মানুষকে কামড়ানোর কোনও ঘটনা কার্যত সেভাবে নেই, তাই ভারতে সমুদ্রের সাপের বিষের অ্যান্টিভেনামও তৈরি হয় না। কয়েকশো কিলোমিটারের ব্যবধানে সাপের বিষের ধরনের তারতম্য হয় বলেও জানাচ্ছেন তিনি। সমুদ্রের সাপ বালিচড় পর্যন্ত কোনওভাবে এসে পড়লেও তার বেশি যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেও জানাচ্ছেন তিনি।
আরও পড়ুন- বিষধর সাপ কামড়েছে কি না বুঝবেন কীভাবে ? কী করবেন ? উত্তর দিচ্ছেন বাংলার ‘সাপ ডাক্তার’
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন