Advance preparation in case of possible disaster on the coast of Bengal and Odisha
দ্যা হোয়াইট বাংলা ডিজিটাল ডেস্ক: ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’-র এখনও জন্ম হয়নি বঙ্গোপসাগরে। তবে সম্ভাব্য দুর্যোগের আশঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে বাংলা ও ওড়িশার উপকূলে। ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে তা সাগরদ্বীপ ও পুরীর মধ্যবর্তী কোথাও আছড়ে পড়তে পারে। তার আগে সতর্ক দুই রাজ্যের প্রশাসনই। সৈকত শহর পুরী মঙ্গলবারের মধ্যেই দৃশ্যত পর্যটকশূন্য করা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাতেও দুই উপকূলবর্তী জেলা— পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আগাম সতর্কতা নিয়েছে প্রশাসন। দুর্যোগের আশঙ্কায় সোমবার থেকেই প্রশাসনের তরফে মাইকিং করা শুরু হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা, সাগরদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, বকখালি-সহ বিভিন্ন উপকূলবর্তী অঞ্চলে। তৈরি রাখা হচ্ছে ‘ফ্লাড শেল্টার’ বা বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলিকে। কাকদ্বীপ অঞ্চলে ইতিমধ্যে একটি কন্ট্রোল রুমও চালু করেছে মহকুমা প্রশাসন। পূর্ব মেদিনীপুরেও দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর-সহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রের দিকে সজাগ নজর রাজ্য প্রশাসনের। আগামী কয়েক দিন দিঘা ও পার্শ্ববর্তী সমুদ্রসৈকতে পর্যটকেরা যাতে কোনও ভাবেই না সমুদ্রস্নানে না যান, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে।
হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, নিম্নচাপ অঞ্চলটি ক্রমে শক্তি বৃদ্ধি করে প্রথমে নিম্নচাপ, তার পর গভীর নিম্নচাপ এবং বুধবার সকালের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে। এর পর সেটি অগ্রসর হবে উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম অভিমুখে। জলভাগের উপর দিয়ে অগ্রসর হওয়ার কারণে এটির শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে। বৃহস্পতিবার সকালে যখন ওড়িশা ও বাংলার উপকূলের কাছাকাছি এসে পৌঁছবে, তখন এটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। পুরী ও সাগরদ্বীপের মাঝখান দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করবে এটি। সেই সময় উপকূলে ঝড়ের গতিবেগ থাকতে পারে ১১০-১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
বৃহস্পতিবার সমুদ্র আরও উত্তাল হবে। বাংলা ও ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছিও বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সমুদ্র উত্তাল থাকবে। ওই সময়ে বাংলা ও ওড়িশার উপকূলে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। দুর্যোগের প্রভাব পড়তে পারে বাংলার দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা ও বাঁকুড়া— এই আট জেলায়।
দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)। ইতিমধ্যে বাংলার জন্য এনডিআরএফের ১৪টি দল এবং ওড়িশার জন্য ১১টি দলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী দুর্যোগ কবলিত এলাকায় তাঁদের মোতায়েন করা হবে।
ঘূর্ণিঝড়ের জেরে দুই রাজ্যের ফসলের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি দফতর সোমবারই কৃষকদের জন্য একটি পরামর্শাবলি জারি করেছে। ধানের ৮০ শতাংশ দানা পেকে গেলে ফসল দ্রুত কেটে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কাটা ধান জমিতে ফেলে না রেখে দ্রুত খামারে তুলে নেওয়ার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে কৃষকদের। পেঁপে, কলা, বিভিন্ন সব্জি, পানের বরজ এবং ডাল শস্যের জমিগুলিতে নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়ার উন্নতি-না হওয়া পর্যন্ত কোনও রাসায়নিক বা কীটনাশক প্রয়োগ করতেও নিষেধ করা হয়েছে।
ওড়িশাতেও গঞ্জাম, পুরী, জগৎসিংহপুর, কেন্দাপাড়া, ভদ্রক, বালেশ্বর, ময়ূরভঞ্জ, কেওনঝড়, ঢেঙ্কানল, জজপুর, আঙ্গুল, খুরদা, নয়াগড় এবং কটকে দুর্যোগের শঙ্কা রয়েছে। আগাম সতর্কতা হিসাবে বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ওড়িশার এই ১৪ জেলায় সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।